সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ‘জ্যেষ্ঠ শিক্ষক’ পদ সৃষ্টি করে প্রথমবারের মতো পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। তবে নানা জটিলতায় এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে সিনিয়র শিক্ষক পদায়নে বিএড-কে (ব্যাচেলর অব এডুকেশন) অন্যতম বাধা হিসেবে মনে করছেন শিক্ষকরা। এছাড়া সিনিয়র শিক্ষক পদায়নে কোনো বিধিমালা না থাকা, বিএড সম্পন্ন করা ও বিএড প্রশিক্ষণ নীতিমালার অভাব পদোন্নতির জটিলতা আরও বাড়ি তুলছে। এছাড়া, অনেক আত্তীকরণ হওয়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও গ্রেডেশনের খসড়া তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
মাউশি বলছে, সারাদেশে ১০ হাজার ৫০৩ জন সহকারী শিক্ষক বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষককে সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। এ বিষয়ে গত ১ ডিসেম্বর অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ৬ হাজার ১৫৫ জন সহকারী শিক্ষকের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই খসড়া তালিকা নিয়ে শিক্ষকদের নানা অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করে।
শিক্ষকরা বলছেন, নিয়োগ বিধির শর্তানুসারে পাঁচ বছরের মধ্যে বিএড প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য তারা ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষকের কাছে এবং ২০১৫ সালে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিতভাবে মাউশিতে আবেদন করেন। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরও প্রাথমিক আবেদন জমা দেন তারা। কিন্তু শ্রেণি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তাদের অনুমতি দেননি প্রধান শিক্ষকরা।
একাধিক শিক্ষক জানান, মাউশির প্রকাশিত তালিকায় অনেক অসঙ্গতি ও ত্রুটি রয়েছে। ১৯৯১ ও এর পরবর্তী সময়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের ২০১৮-এর নিয়োগবিধি অনুযায়ী তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, যা তাদের নিয়োগবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া আত্তীকরণ হওয়া বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষকের নাম খসড়া তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। যার কোনো ভিত্তিই নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, যারা সময়মতো বিএড করেননি তাদের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা এখনও প্রকাশ করেনি মাউশি।
এছাড়া, নিয়োগের ৫ বছরের মধ্যে যেসব শিক্ষক বিএড-এ ভর্তি হয়েছেন কিন্তু ফল প্রকাশিত হয়েছে ৫ বছর পর তাদের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এবং আদালতে বিএড সংক্রান্ত রায় বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দীন মাহমুদ সালমী বলেন, ১৯৯১ সালের চাকরি বিধিতে একাধিক ৩য় বিভাগ থাকলেও পদোন্নতি গ্রহণযোগ্য ছিল। খসড়া তালিকায় এ বিধিমালা অনুসরণ না করায় এখানে অনেকের নাম বাদ পড়েছে। এখন পদোন্নতির জন্য ৮ বছরের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিএড-ও চাওয়া হয়েছে।
মাউশি সূত্রে জানা যায়, এই পদে কর্মরত শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডে (২২ হাজার টাকা মূল বেতন) বেতন পাবেন। এই পদে সারাদেশের ৫ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষক এবার পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে মোট পদের অর্ধেক শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মাউশির তালিকাকে অসঙ্গতিপূর্ণ বলছেন শিক্ষকরা।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি আবেদন (অভিযোগ) আমরা পেয়েছি। আত্তীকৃত শিক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হয়ত থেকে গেছে। এখন এটা যদি আইনি বিধি-বিধানে না থাকে তবে তা বাদ দেয়া হবে।’
বিধিমালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ বিধিমালা আছে। সিনিয়র শিক্ষক পদটি ২০১৮ সালে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের আগের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তবে এখন যে নিয়োগ বিধিমালা আছে তা একত্র করে কাজ করবে অভিজ্ঞ কমিটি।’
বেলাল হোসেন আরও বলেন, ‘যেসব বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট কোন কিছু নেই, সে বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে স্পষ্টীকরণ চাইব। দরকার হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পর্যন্ত যেতে হতে পারে। একটা কথা বলতে পারি, বিধিবিধানের বাইরে কোনো কিছু করা হবে না।’